শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ`| importance of child development
একটি শিশু জন্মের পর থেকে মা-বাবার সাধারণত অনেক বেশী খেয়াল থাকে একটি শিশু ঠিক সময়ে হামাগুড়ি দিতে পারল কিনা অথবা সে ঠিক সময় কথা বলতে পারল কি না এবং সঠিক সময়ে হাঁটাহাঁটি করতে পারছে কিনা অথবা তার শারীরিক বৃদ্ধি ঠিকমত হচ্ছে কিনা।
আমাদেরকে অবশ্যই এই সকল বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে। এগুলো হচ্ছে শিশুর শারীরিক বিকাশ। শুধু মাত্র আমাদের শিশুর শারীরিক বিকাশের দিকে খেয়াল রাখলেই চলবে না, এর সাথে সাথে আরো অনেকগুলো বিষয় খেয়াল করতে হবে।
আজকের আর্টিকেলে sabkichu.com থেকে আমারা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিয়ে জানব। একটি শিশু পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত তার ভিতর নানা ধরনের বিকাশ ঘটে।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ`| importance of child development

শিশুর বিকাশ কিভাবে হয়
সাধারণত শিশুর বিকাশ পাঁচ রকমের হয়ে থাকে তার মধ্যে আজকে আমরা আলোচনা করব শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিয়ে। তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেই শিশুর বিকাশ কিভাবে হয়

আরও পড়ুন...
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ- শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রথম ৩ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শিশুদের মস্তিষ্কে হাজার হাজার নিউরোনাল সংযোগ তৈরি হয়। নিউরন হল আমাদের মস্তিষ্কের কোষ বা একক। আরও সহজ করে বললে, নতুন বাড়ি তৈরি করতে যেমন একটা একটা করে ইট বসাতে হয়, তেমনি বাচ্চাদের মস্তিষ্কে একটা একটা করে হাজার হাজার কোষ তৈরি হয়। তারপরে আমরা যা দেখি এবং করি তা আমাদের মস্তিষ্কে নিউরোনাল সংযোগ তৈরি করে যার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের আকার বৃদ্ধি পায়।
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সময়ে আপনাকে স্নেহ করতে হবে। আবার কিছু নিয়ম মেনে অনুশীলন করতে হবে। অনেক সময় শিশুরা দুষ্টুমি করে, আমরা তাদের ভয় দেখাই এবং না বুঝে শাস্তি দিই। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস কমে যায়। শিশুর প্রতিটি কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে।
সন্তানরা পিতামাতার কাছে তাদের জীবনের একটি অমূল্য সম্পদ এবং সন্তানের মাধ্যমে তাদের জীবন ধন্য হয়। শিশু হলেও সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ। তার কাজের সমালোচনা না করে কীভাবে কাজটিকে সুন্দর করা যায় তার সঙ্গে আলোচনা করুন।
শিশুর প্রতিটি মতামত গুরুত্ব সহকারে শুনতে হবে। শিশুর সাথে তার পছন্দ-অপছন্দের কথা বললে তার চিন্তার দক্ষতার বিকাশ ঘটবে। শিশু যে জিনিস ব্যবহার করে তা যদি তার পছন্দ অনুযায়ী কেনা সম্ভব হয়, তাহলে শিশুর মধ্যে মতামত দেওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে। তার পছন্দের বিছানার চাদর, পড়ার টেবিল, কী পোশাক পরবেন, এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
আরও পড়ুন......
আমরা অনেকেই বাচ্চাকে মেঝেতে নামতে দেই না। খেলনা নিয়ে খেলতে নিষেধ করি, আমরা আশঙ্কা করছি যে শিশুটি পড়ে যেতে পারে বা আহত হতে পারে। কিন্তু শিশুদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য, তারা হাঁটবে, খেলবে- পিতামাতার তাদের সন্তানদের ভয় দেখানো উচিত নয়। তাকে তার মতো থাকতে দেওয়া উচিত।
অনেক সময় বাবা-মা সন্তানের সব কাজ করে দেন। এটা করা ঠিক নয়। এতে করে শিশু দায়িত্ব নিতে শেখে না। দায়িত্ব নিতে ভয় পায়। শিশুকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, শিশু খাওয়ার পরে তার প্লেট পরিষ্কার করবে। স্কুল থেকে বাসায় আসার পর নিজে স্কুল ড্রেস, জুতা ও মোজা খুলে ফেলা, ঘুমানোর সময় নিজের বিছানা নিজেকে পরিষ্কার করার মত ছোট ছোট কাজ করতে শিখাতে হবে। কিন্তু কোনো শিশু যদি এসব কাজ না করে, তাহলে তাকে বকা দেওয়া যাবে না। শিশুকে বুঝিয়ে বলুন যে তার নিজের কাজ করা উচিত। নিজের কাজ করতে দোষের কিছু নেই।
শিশুরা যদি কিছু করতে চায় তবে আমরা তা নিষেধ করব না যদি না তা তাদের জন্য ক্ষতিকর হয়। আমরা তাদের সাহস দেব।
অনেক সময় বাচ্চাদের দামি খেলনা ভাঙলে আমরা বকাঝকা করি। শিশুরা কোন কিছু ভেঙ্গে বা নষ্ট করার সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন আমরা তাকে বলবো তোমার খেলনা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই তোমার খুব মন খারাপ। কিন্তু পরের বার আমরা খেয়াল রাখব খেলার সময় যেন খেলনাটা না ভেঙ্গে যায়।
আপনি যদি আপনার সন্তানের সাথে প্রতিশ্রুতি দেন তবে আপনার তা পালন করা উচিত। সেই সঙ্গে শিশুকে ভালো কিছু করার জন্য পুরস্কৃত করতে হবে। ধরুন আপনি সপ্তাহের শুরুতে আপনার সন্তানকে বলেছিলেন যে আপনি যদি পাঁচ দিনের জন্য স্কুলে যান তবে আমি আপনাকে শুক্রবার বেড়াতে নিয়ে যাব। পাঁচ দিন ঠিকমতো স্কুলে গেলে শুক্রবার তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। আর যদি সে চার দিনের জন্য যায়, কিন্তু একদিনের জন্য না যায়, তাহলে তাকে বেড়াতে নেওয়া উচিত নয়। কিন্তু আমরা যদি প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও না যাই, তবে তার হৃদয় ভেঙে যাবে। আপনি যদি আপনার সন্তানকে প্রতিশ্রুতি দেন তবে আপনাকে অবশ্যই তা পালন করতে হবে।
খেলাধুলাকে উৎসাহিত করতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলারে আগ্রহী করে তুলতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে। এবং বাচ্চাদের অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
শিশুর বিকাশে কি ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে?
সঠিক বয়সে ঘাড় সোজা রাখতে না পারা, বসতে না পারা, হাঁটতে না পারা, কথা বলতে না পারা, অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁটা, সারাক্ষণ লালা ঝরা। বয়স অনুযায়ী নিজের যত্ন নিতে না শেখা, মনোযোগের অভাব, আক্রমনাত্মক-একগুঁয়ে আচরণ, হঠাৎ উত্তেজনা, অত্যধিক শান্ত বা অতিরিক্ত সক্রিয় হওয়া, সমবয়সীদের সাথে সামাজিকতা না করা, পোষাক গ্রহণ না করা, চোখের যোগাযোগ না করা, খিঁচুনি হওয়া, অর্থের হিসাব রাখতে অক্ষমতা, আত্ম-ক্ষতি (হাত কাটা, হাত কামড়ানো, দেয়ালে মাথা ঠেকানো, আত্মহত্যার চেষ্টা), স্কুলে যেতে না চাওয়া, খুব মন খারাপ করা, যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ ইত্যাদি। শিশুর ক্ষেত্রে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ যত তাড়াতাড়ি শিশুকে যত্নে আনা যায় ততই ভালো।
প্রথম বছরে সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের বিষয়ে পিতামাতার জন্য টিপস
১। বারবার কথা বলা, বাচ্চার সাথে প্রতিদিন অনেকক্ষণ কথা বলা। শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন।
২। শিশুকে বিভিন্ন গল্পের বই এবং ছড়া পড়ে শুনান।
৩। বারবার সন্তানের নাম ডাকা। তাকে বিভিন্ন সাধারণ শব্দে অভ্যস্ত করা। এতে শিশু খুব দ্রুত মৌলিক শব্দগুলো আয়ত্ত করতে পারে।
৪। আপনি যদি দেখেন যে আপনার শিশু একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বারবার খুশি বা উত্তেজিত হয়, তাহলে শিশুর সাথে বারবার সে বিষয়ে কথা বলুন। উদাহরণস্বরূপ, অনেক সময় শিশুরা একটি নির্দিষ্ট খেলনা, একটি নির্দিষ্ট সঙ্গীত বা একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে উপভোগ করে। প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করুন যাতে এটি সর্বদা আপনার সন্তানের সাথে ঘটে।
৫। শিশু কী বলতে চাইছে বা বোঝাতে চাইছে তা বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় এবং ধৈর্য ধরুন। খুব বেশি রেগে যাবেন না বা ধৈর্য হারাবেন না কারণ আপনি তাকে বুঝতে পারছেন না। এতে শিশুর মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৬। শিশুর চোখের সামনে সবকিছু রঙিন রাখার চেষ্টা করুন। রঙিন কাগজ, রঙিন খেলনা শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে খুবই সহায়ক।